







‘ছেলে আমাদের দেওয়া কথা রেখে গেল, আমরা পারলাম না কথা রাখতে’। ছেলের উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট জানার পর কান্নাভরা চোখে এই আক্ষেপের কথাই জানাচ্ছিলেন শুভ্রজিতের বাবা বিশ্বজিতবাবু। তিনি বলেন, “ছেলে আমাদের কথা দিয়েছিল উচ্চমাধ্যমিকে খুব ভালো রেজাল্ট করবে।




সবাইকে দেখিয়ে দেবে। ৭৫% নম্বর-সহ স্টার মার্কস পেয়ে সত্যিই দেখিয়ে দিল। রেজাল্ট ভালো হলে দামি মোবাইল উপহার হিসেবে চেয়েছিল। আর রেজাল্ট বেরনোর দিন সপরিবারে বিরিয়ানি খেতে যাওয়ার আবদার করেছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ডাক্তারদের অপদার্থতার জন্য সন্তানকে হারালাম।”




গত ১০ জুলাই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃ’ ত্যু হয় ইছাপুরের বাসিন্দা শুভ্রজিতের। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে তার মৃ’ ত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। বেসরকারি হাসপাতালের হাতে লেখা রিপোর্টকে ভরসা করে করোনা সন্দেহে শুভ্রজিতকে অচ্ছুত করে রাখে একাধিক হাসপাতাল।




শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখেও হাসপাতালে ভর্তি না করার অভিযোগ একাধিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়েই মা’ রা যায় শুভ্রজিত, এমনটাই অভিযোগ। মৃ’ ত্যু’ র পরেও শুভ্রজিতকে নিয়ে টানাপড়েন চলতে থাকে। কীভাবে মৃ’ ত্যু হয়েছে জানতে পরিবার সুরজিতের দেহের ম’ য়না’ তদন্ত চায়।




চিকিৎসার গাফিলতিতে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করে। রাজ্য সরকারের তরফে কোনও আশ্বাস না মেলায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় শুভ্রজিতের পরিবার। শেষমেষ আদালতের হস্তক্ষেপ করে ময়নাতদন্তের আদেশ দেয়। শেষবারের মতো ছেলের মুখ দেখার সুযোগ পান মা-বাবা। সৎকার করার অনুমতিও দেওয়া হয়। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট দিতে বলেছে আদালত।




এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল শুভ্রজিত। রেজাল্ট ভালো হবেই সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল। ৩৬০ নম্বর পেয়ে ‘এ’ গ্রেডে পাস করেছে সে। কিন্তু নিজের কষ্টের ফল দেখে যেতে পারল না। মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায় ছেলের রেজাল্ট অনলাইনে দেখার পর বলছিলেন, “রেজাল্ট ভাল করার জন্য কত রাত অবধি পড়ত।।




রাত তিনটে অবধি আমিও জেগে থাকতাম ছেলের সাথে। ওর সঙ্গ দিতাম। বারবার আমায় বলত ঘুমিয়ে পড়তে। কত কষ্ট করল ভালো রেজাল্ট করার জন্য। কিন্তু সেই আজ জীবিত নেই। আমি ছেলের মৃ’ ত্যু’ র জন্য যারা দায়ী তাদের শেষ দেখে ছাড়ব। সুবিচারের জন্য যত দূর যেতে হয় আমি যাব।”



















