Home / Health / রাজ্যে নতুন রোগ “স্ক্রাব টাইফাস”, আক্রান্ত ১৪,০০০, জানুন এই রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা

রাজ্যে নতুন রোগ “স্ক্রাব টাইফাস”, আক্রান্ত ১৪,০০০, জানুন এই রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা

Copy

রাজ্যে যখন করোনা সংক্রমণে নাজেহাল অবস্থা, ঠিক তখনই নিস্তব্ধে বেড়ে চলেছে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা। স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও নগণ্য নয়। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলি থেকে ১৩,৭০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো রকম প্রাণহানির খবর নেই।

রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাজ্যের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালগুলিতে জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের মধ্যে ১০ জনের মধ্যে দুই থেকে তিনজন স্ক্রাবের কামড়ে অসুস্থ। স্ক্রাব টাইফাসে রাজ্যে সব থেকে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা হল মুর্শিদাবাদ জেলায়।

পাশাপাশি অন্যান্য যে সকল জেলায় এর প্রভাব পড়েছে সেগুলি হল পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনার মত জেলাতেও। আর এইভাবে দ্রুতগতিতে স্ক্রাব আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে রাজ্য সরকারের। যদিও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এর মোকাবিলায় আলাদা করে সেল খোলা হয়েছে।

স্ক্রাব টাইফাস কি?

মাইট নামে অতি ক্ষুদ্র একটি জীব কামড়ালে ব্যাকটেরিয়াঘটিত এই অসুখ হয়। যার জন্য দায়ী ওরিয়েনসিয়া শুশুগামুসি নামের একটি ব্যাক্টেরিয়া। দেখতে ছোট পোকার মতো হলেও আদতে মাইট কিন্তু কোনও পোকা নয়। আকারে ০.২ মিলিমিটার থেকে ০.৪ মিলিমিটার মাপের হয় মাইট। এর লার্ভা থেকে এই রোগ ছড়ায়।

এই সকল মাকড়ের বাহক হয়ে থাকে কখনো ইঁদুর, কখনো আবার কুকুর। এই রোগের লক্ষণ হলো, শরীরে প্রচন্ড জ্বর দেখা যায়। জ্বর এতটাই থাকে যে গায়ের তাপমাত্রা ছেঁকা লাগার মত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ফলে রোগী দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই রোগে খিঁচুনি হতে পারে। রোগীরা জ্ঞান হারাতেও পারেন।

স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। ধীরে ধীরে রোগীর শরীরে সমস্ত অরগ্যান কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এর লক্ষণ অনেকটা ডেঙ্গির মত। যে কারণে চিকিৎসকেরা অনেক ক্ষেত্রেই রোগ ধরতে পারেন না এবং চিকিৎসায় বিলম্ব হয়।

স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণ

ডেঙ্গি আর স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণগুলি অনেকটা একই রকম। শরীরে জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার প্রায় ১-২ সপ্তাহ পর শীত শীত ভাব, কাঁপুনি-সহ আকস্মিক জ্বর, মাথা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এই উপসর্গগুলি দেখা দেওয়ার ৩ থেকে ৫ দিন পরে শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণগুলি হল

সাংঘাতিক মাথা ব্যথা

হাই-ফিভার (১০৪ পর্যন্ত জ্বর)

পিঠে ও বুকে র‍্যাশ (যা ক্রমশই ছড়াবে)

লো ব্লাড প্রেশার (হাইপোটেনশন)

উজ্জ্বল আলোর দিকে চোখ মেলে তাকাতে না পারা

পেশিতে বিশাল ব্যথা

স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ নিয়ে এযাবত মানুষের মধ্যে চিরন্তণ ধারণা ছিল যে এই রোগের বিস্তার খুব কম। কিন্তু সেই ধারণাকে বর্তমানে বদলে দিয়েছে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা। পাশাপাশি এই রোগে আক্রান্তের খোঁজ মিলছে বর্তমানে গ্রামাঞ্চল ছেড়ে শহরতলী ডানলপ, বরানগরের মত জায়গা থেকেও। তাই এই সময় সাধারণ মানুষকে ব্যাপক সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে এই রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে।

রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যে আলাদা করে সেল তৈরি করা হলেও এই রোগ থেকে দূরে থাকার সবথেকে বড় উপায় হলো নিজেদের এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। কারণ এই রোগের বাহক যে মাকড় সেই মাকড় নোংরা আবর্জনা থেকেই ছড়িয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি প্রচন্ড জ্বর এবং শরীরে র‌্যাশ দেখা দিলে কোনরকম দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কলকাতায় কবে প্রথম এই রোগ ধরা পড়েছিল, তা চিকিৎসকরা বলতে না পারলেও বছর দুই আগে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে ভর্তি হওয়া এক শিশুর শরীরে এই রোগ ধরা পড়ে৷ উত্তরবঙ্গের মিরিক এবং সংলগ্ন পাহাড়ি অঞ্চলেই সাধারণত মাইটের খোঁজ পাওয়া যায়৷ তাই কলকাতায় এই রোগের উদয় হওয়ার পিছনে কোনও বাহকের ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা৷

তবে আশার আলো বলতে একটাই যে ডেঙ্গির যেখানে নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই৷ সেখানে স্ক্রাব টাইফাসের কিন্তু ওষুধ রয়েছে। ফলে সঠিক চিকিৎসা হলে জীবনহানির আশঙ্কা কম। আর এই রোগ ছোঁয়াচেও নয়৷ ডেঙ্গির মতো ওষুধ স্প্রে বা ফগিং করে স্ক্রাব টাইফাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। স্ক্রাব টাইফাসকে রুখতে দরকার সচেতনতা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা৷

Check Also

১টা মা’ত্র পে’য়া’রা ব’দ’লে দি’তে পা’রে আ’পনা’র জী’ব’ন। বলছে গ’বেষ’ণা প’ড়ুন

Copy সকলের কাছেই পেয়ারা বেশ পছন্দের ফল। সে কাঁচাই হোক বা পাকা। পছন্দের হলেও প্রতিদিন ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *