উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দিগন্তিকা বোস জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একের পর এক আবিষ্কারের জন্য পুরস্কৃত হয়ে চলেছেন। আবিষ্কারের ভান্ডার ক্রমশ বাড়ছে মফস্বলের বাঙালি তনয়ার। এবার করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারের নয়া পন্থা আবিষ্কার করে জাতীয় পুরস্কারের স্বীকৃতি পেলেন বাঙালি তরুণী।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ভিএম ইন্সটিটিউশন ইউনিট-২-এর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দিগন্তিকা বোস জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একের পর এক আবিষ্কারের জন্য পুরস্কৃত হয়ে চলেছেন। দিগন্তিকার আবিষ্কারের সংখ্যা ইতিমধ্যে এগারোয় পৌঁছে গেল। পুরস্কার পাওয়ার সেই ধারা অব্যাহত।
এবারও জাতীয় পুরস্কার পেলেন দিগন্তিকা। ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল, সৃষ্টি ও জ্ঞানের মতো আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাঁর আবিষ্কার নিয়ে পর্যালোচনা করেছে।
দিগন্তিকা ছোট থেকেই নানা ধরনের আবিষ্কারে নিমগ্ন থাকেন। সন্দুরবনে মধু সংগ্রহ করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ চশমা তৈরি করে ছোট্ট দিগন্তিকা প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন বৈজ্ঞানিক মহলে। দিগন্তিকা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, “১৫ অক্টোবর ভারতের প্রক্তন রাষ্ট্রপতি ড. এপিজে আবদুল কালামের নামাঙ্কিত জাতীয় পুরস্কার ডাঃ এপিজে আবদুল কালাম ইগনাইটেড মাইন্ড চিলড্রেন ক্রিয়েটিভিটি এ্যণ্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। যা সংস্থার ওয়েবসাইটে ঘোষণা হয়েছে।
এই ঘোষণায় আমি অত্যন্ত খুশি।” ১৭ বছরের দিগন্তিকা এই ঘোষণার পর নতুন উদ্যমে ফের গবেষণা শুরু করেছে। কোভিড-১৯ এর ওপর পাঁচটি বিশেষ গবেষণা রয়েছে দিগন্তিকার। জানা গিয়েছে, পুরস্কার পর্যালোচনা কমিটিতে ছিলেন ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি মন্ত্রনালয়ের ন্যাশনাল ইনোভেশন ফাউন্ডেশন-এর অধিকর্তা ডঃ বিপিন কুমার, প্রফেসর অনিলকুমার গুপ্তা(সিএসআইআর ভটনাগর ফেলো),
পিভিএম এম রাও, অধ্যাপক এবং প্রধান, ডিজাইন বিভাগ, আইআইটি-দিল্লি, ডাঃ বিশ্বজনানী সতীগেরী (প্রধান, সিএসআইআরটিটিডিএল),সহ বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা। চলতি বছরে ২২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে মোট নয়টি প্রোজেক্ট জাতীয় পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। দিগন্তিকার বিভাগে প্রতিযোগীদের বয়স ১৯ বছর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল।
দিগন্তিকার আবিষ্কার “ইয়ার প্রেসার রিডাকশন টুল ডিউ টু দ্যা ইউজ অব মাস্ক” (“Ear pressure reduction tool due to the use of mask”)। এই নয়া আবিষ্কার কিভাবে কাজ করবে?
দিগন্তিকা বলেন, “স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশকে দিনে দীর্ঘ সময় ধরে মাস্ক পরতে হয়, ফলস্বরূপ কানের উপর ক্রমাগত চাপ পরে। এভাবে টানা মাস্ক পরে থাকার ফলে কানে ব্যাথা অনুভব করেন। এই সমস্যার সমাধানে একটি ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের সাহায্যে(বা কোনও নমনীয় বোর্ড) দিয়ে আমি একটি নকশা তৈরি করি। যখন আপনি মাস্ক ব্যবহার করবেন তখন মাথার পিছনে আটকে থাকবে। ফলে কানের উপর কোনও চাপ থাকবে না। তার কারণে দীর্ঘ সময় মাস্ক ব্যবহার করলেও কানে কোনওরকম ব্যথা বা সমস্যা হবে না। আপনার অস্বস্তি দূর হয়ে যাবে এই নয়া আবিষ্কারে।”
মেয়ের নতুন আবিস্কারে খুশি বাবা সুদীপ্ত বোস। সুদীপ্ত বোস বলেন, “ছোট থেকেই নানা ধরনের গবেষণা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে ভালবাসে দিগন্তিকা। ওর পড়ার ঘরটাই হয়ে উঠেছে ছোটখাট গবেষণা কেন্দ্র। এর আগেও মেয়ে একাধিক পুরস্কারও পেয়েছে নতুন নতুন চিন্তাধারার জন্য। মেয়ের আবিষ্কারের স্বীকৃতিতে বাবা তো আনন্দ পাবেই।”