









বিয়ের পরে মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, কেউ কেউ আবার স্বামী-স্ত্রী মিলে গড়ে তোলে একক পরিবার। কিন্তু সন্তান ধারণ করার পর থেকে প্রসবকালীন সময়টায় বেশিভাগ নারীকেই দেখা যায় বাবার বাড়িতে চলে যেতে।





আমার চারপাশে দেখা সিংহভাগ নারীর মধ্যেই দেখেছি এই প্রবণতা। প্রশ্ন উঠেছে, কেন তারা এই সময়টায় শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করে না? তবে কী, গ’র্ভবতী নারীর পরিচর্যায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মধ্যে কোনো আন্তরিকতার অভাব রয়েছে?





অনেকটা কৌতুহলবশত, একটা জরীপ উদ্দেশ্য ছিল, পরিচিত পরিমণ্ডলের বাইরের অবস্থাটা কেমন, সেটিও একটু দেখে নেয়া।
জরীপের ফলাফলে দেখা গেল ৪৩% ভোটার বলেছেন গর্ভবতী নারীর পরিচর্যায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন একেবারেই আন্তরিক নয়। বাকি ৫৭% বলেছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন যথেষ্ট আন্তরিক।





তবে মুশকিল হলো, এই ৫৭ শতাংশের অর্ধেকের বেশি ভোটা দাতা ছিল পুরুষ। অর্থাৎ নারীর চেয়ে পুরুষরাই বেশি মনে করছে যে শ্বশুরবাড়িতে গ’র্ভবতী নারীর পরিচর্যায় কোনো ঘাটতি নেই! আরও মজার তথ্য হলো, যে ৪৩ শতাংশ ভোটদাতা মনে করে যে শ্বশুরবাড়ির লোকজন গর্ভবতী নারীর পরিচর্যায় একেবারেই আন্তরিক নয়, তাদের মধ্যে নারীর পাশাপাশি অনেক পুরুষও রয়েছে।





আসুন দেখা যাক, আন্তরিকতার যে অভাব তা কীভাবে ফুটে উঠছে।
আমার এক দেবরের বউয়ের কথাই ধরা যাক। সন্তান ধারণ করার পর থেকেই শুনে আসছিলাম, তার পেটে ব্যথা। ডাক্তার তাকে বিশ্রামে থাকতে বলেছে। ফলে তাকে বেশিভাগ সময়ই বসে অথবা শুয়ে থাকতে দেখা যেত। এ নিয়ে তার শাশুড়ির অভিযোগের শেষ ছিল না। প্রায়ই তিনি বলতেন, “কী জানি বাপু, আমিও দুইটা পোলার মা হইছি, কোনো ব্য’থা-ট্যাথা তো ছিল না। ঢং করার আর জায়গা পায় না”।





বুঝতেই পারছেন, শ্বশুরবাড়িতে আমার দেবরের বউটির পক্ষে পুরো সময়টা থাকা সম্ভব হয়নি। ফলে সে কোনো মতো ছয়টি মাস পার করেই বাবার বাড়িতে চলে যায়। যখন সে বাবার বাড়িতে যায়, তখন সে মা’রাত্মক র’ক্তশূণ্যতা ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এখানে মূল সম’স্যাটি হলো নিজের সাথে অন্যকে মিলিয়ে ফে’লা।





শাশুড়ির যেহেতু গর্ভাবস্থায় কোনো রকম পেটে ব্যথা হয়নি, তাই তিনি ধরেই নিয়েছেন আর কারোই তা হবে না এবং তার পুত্রবধূ পেটে ব্য’থার বাহানায় সংসারের কাজে ফাঁ’কি দিচ্ছে। সত্যি বলতে কী, গ’র্ভবতী নারীদের একেকজনের বৈশিষ্ট্য একেক রকম। নিজের সাথে অন্যের তুলনা করা রীতিমত মূর্খতা।





যেমন, গ’র্ভকালীন সময়ে বমি হওয়া খুব স্বাভাবিক। নিজের কথাই বলি, আমি গ’র্ভধারণের আগে বাসে উঠলেই বমি করতাম, অথচ গ’র্ভকালীন পুরো নয় মাসে একদিনও বমি করিনি। আমার অনেক কিছুই অন্যান্য গর্ভবতী নারীদের সাথে মেলেনি।





যেমন গ’র্ভাবস্থায় অনেকের চরম অ্যাসিডিটি হয়, কোমরে ও হাত-পায়ে ব্যথা হয়, শেষের দিকে ঘুম হয় না। কিন্তু আমার এই জাতীয় কোনো সম’স্যাই ছিল না। তবে, শারী’রিক কিছু জটিলতার কারণে আমারও দু/একবার পেটে ব্য’থা হয়েছে এবং হাস’পাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।





এখন আমি যদি ভবিষ্যতে আমার উপসর্গগুলোর সাথে অন্য কোনো গর্ভবতী নারীর উপসর্গ মিলিয়ে তাকে বিচার করার চে’ষ্টা করি, সেটি কি অন্যায় নয়? আমি বলব, সেটি একটি মস্ত বড় অ’ন্যায়। কারণ, সন্তান ধারণের পর একেকজনের উপসর্গ একেকরকম। সরলীকরণ করা একদম উচিত নয়।





শ্বশুরবাড়ির প্রধান নারী চরিত্রটি যখন এই রকম, তখন আসুন দেখা যাক শ্বশুরবাড়ির প্রধান পুরুষ চরিত্রটি কী ভূমিকা পালন করছে। আমার এক ফুপাতো বোনের কথা মনে পড়ছে। বেচারি যে সময়টায় গ’র্ভধারণ করে, ঠিক সেসময়টাতেই তার স্বামীর ব্যবসায় মন্দা দেখা দিতে শুরু করে। ফলে সংসারের আয়-উন্নতি কমে যায়।





পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, ভদ্রলোক তার গ’র্ভবতী স্ত্রীকেই দুধ-ডিম, ফলমূল খাওয়াতে পারছিল না, সেখান পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য এসব কিনে আনার কথা সে ভাবতেই পারছিল না। তাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সমস্যা হবার কথাও নয়, কারণ আমার ফুপাতো বোনের শ্বশুর চাকরি করতেন।





ফলে, তারা নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করতে স’ক্ষম। সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়। সমস্যা ছিল তার শ্বশুরের মানসিকতায়। পুত্রকে জন্ম দিয়েছেন, মানুষ করেছেন, লেখাপড়া শিখিয়েছেন তারা। সেই পুত্র এখন আয় করছে, অথচ দুধ-ডিম, ফলমূল কিনে এনে পরের মেয়েকে (পুত্রবধূকে) খাওয়াচ্ছে সে, নিজের বাবা-মাকে কেন খাওয়াচ্ছে না? এটি কোনোভাবেই মানতে পারে না আমার ফুপাতো বোনের শ্বশুর।





ফলে হবু-মায়ের জন্য যাই কিনে এনে রেফ্রিজারেটরে রাখা হতো, তাই তার শ্বশুর-শাশুড়ি খেয়ে শেষ করে নিজেদের শতভাগ অধিকার নিশ্চিত করতো। এমনকি, সংসারের কাজ করার জন্য গৃহপরিচারিকা রাখাও পছন্দ করতো না তার শ্বশুর, এটাকে তিনি অপচয় ভাবতেন।





গর্ভবতী হোক আর যাই হোক, ছেলের বউকেই সংসারের কাজ করতে হবে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সত্যিকার অর্থেই দায়িত্ববান এবং আন্তরিক শ্বশুর-শাশুড়িরা আমার লেখা পড়ে গাল ফু’লিয়ে বসেছেন। নিশ্চয়ই ভাবছেন, সবাইকে আমি একই পাল্লায় মাপছি। মোটেই না।





অনেক শ্বশুর-শাশুড়িই আছেন যারা গর্ভবতী পুত্রবধূর সেবায় যথেষ্ট আন্তরিক এবং পুত্রবধূ তাদের কাছে থেকেই সন্তান প্রসব করছে। কারণ, তারা এটা খুব ভাল করেই বোঝেন যে, গর্ভবতী পুত্রবধূর সেবা করার সাথে সাথে তাদেরই ভবিষ্যৎ বংশধরের সেবা করছেন তারা। আসলে গর্ভকালীন সময়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকাটা খুব একটা সম’স্যা নয়, যদি স্বামী পাশে থাকে।
























