করোনা কালে রোজকার ভিড়ভাট্টা-ব্যস্ত জীবনযাপন থেকে দূরে কোথাও নিভৃতযাপনের আইডিয়া মন্দ নয়। গত কয়েক মাসে মানুষ এটুকু অন্তত বুঝতে পেরেছে, যে বাতাসবাহিত এই মারণ ভাইরাসকে প্রতিহত করার মোক্ষম দাওয়াই, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। কিন্তু শহুরে যান্ত্রিক জীবনে সেটা আদৌ কতটা বজায় রাখা সম্ভব তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন অনেকে। যতই চেষ্টা করুক, দূরত্ব বিধি মানতে ভুলচুক হচ্ছেই।
কিন্তু ইতালির এক ছোট্ট শহরে একেবারে উল্টো চিত্র দেখা গিয়েছে। পাণ্ডবর্জিত ছোট্ট শহর নর্টস্কে। আর সেখানেই থাকেন জিওভানি কারিলি এবং জিয়ামপিয়েরো নোবিলি। মজার বিষয়, শহরে তাঁরাই একমাত্র বাসিন্দা। কিন্তু দিব্যি কোভিড প্রোটোকল মেনে চলেছেন তাঁরা। ইতালিতে কীভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল এবছরের শুরুতে তা সোশ্যাল মিডিয়া, খবরের দুনিয়া মারফত সবারই জানা। কিন্তু ছোট্ট শহরে একমাত্র দুই বাসিন্দাও সরকারের বিধিনিষেধ মেনে চলেছেন, যা রীতিমতো আশ্চর্যের।
সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই প্রবীণ বাসিন্দা কোনও ঝুঁকিই নিতে চান না। যদিও তাঁরা প্রতিবেশী এবং নিভৃতযাপনে রয়েছেন এই পাণ্ডববর্জিত শহরে। উমব্রিয়া প্রদেশের পেরুজিয়ায় রয়েছে এই ছোট শহর। পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় জায়গা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় খুব দুর্গম বলা যায়। কিন্তু এমন পরিবেশেও কারিলি এবং নোবিলি স্বাস্থ্য নিয়ে ভীষণ সচেতন। সবসময় মাস্ক পরেই থাকেন তাঁরা। ৮২ বছরের কারিলি সিএনএনকে বলেছেন, “ভাইরাসকে খুব ভয় পাই। যদি অসুস্থ হই, আমার মতো একা মানুষকে কে দেখবে? আমার বয়স হয়েছে, ভেড়াগুলো পালন করছি, আঙুর খেত আছে, গাছগাছালি রয়েছে। মাশরুম খেয়ে দিব্যি মজায় আছি।”
ইতালিতে সব ধরনের জনবহুল জায়গায় মাস্ক বাধ্যতামূলক। ঘরে হোক বা বাইরে। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কড়া নিয়ম সরকারের। দূরত্ববিধি না মানলেই মোটা টাকা জরিমানা করে পুলিশ। মাস্ক না পরলেও একই শাস্তি। সেই পরিস্থিতিতে এমন অজ পাড়াগাঁয়ে কেন এত নিয়ম মানেন দুই বৃদ্ধ! নোবিলি সিএনএন-কে বলেছেন, “নিয়মের তোয়াক্কা না করলে অপরকে বিপদে ফেলার সমান।
মাস্ক পরা, আর শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের কারণে নয়, এটা খারাপ বা ভাল নয়। নিয়ম থাকলে সেটা নিজের এবং অন্যের ভালর জন্য অবশ্যই মানা উচিত। এটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।”
যেখানে মানুষ নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি নিজের এবং অন্যের জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলছেন, সেখানে এই দুই বুড়ো গোটা বিশ্বকে অতিমারীর আবহে দায়িত্বশীল হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন।