




এক হৃদ’য়বিদা’রক ঘটনা! ছে’লের কথা মনে পড়লে ছবি দেখেন বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মা! – সবসময়ই ছে’লের কথা মনে পড়ে। ইচ্ছা করে ছে’লের ছোটবেলায় আমি যেমন তাকে বুকে আগলে রেখেছিলাম, আমা’র এই বৃদ্ধা বয়সে ছে’লেও যেন আমাকে আগলে রাখে। আমা’র মা’থায় হাত বুলিয়ে দিক, ও’ষুধ খাইয়ে দিক।





কিন্তু ছে’লে তো নিজের কাজের জন্য অনেক দূ’রে থাকে। তাই তো আমি এই প্রবীণ নিবাসে।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রবীণ হি’তৈষী সং’ঘে থাকা ষাটোর্ধ্ব এক মা রেহেনা খাতুন (ছদ্ম নাম)। কোনো নির্দিষ্ট দিবসে নয়, ছে’লের কথা সবসময়ই মনে পড়ে, ছে’লেকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করে কিন্তু… বলে দীর্ঘশ্বা’স ফেললেন তিনি। বললেন,





যখন বেশি মনে পড়ে তখন তার ছবি দেখি, ছবিতেই হাত বুলিয়ে দিই। রোববার দুপুর প্রায় ১২টা। রাজধানীর প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ তলায় চলছিল মা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠান। এখানকার যারা বৃদ্ধ, যারা নিজেদের জীবনের সবটুকু সময় ও ধনসম্পদ বিনিয়োগ করেছিলেন সন্তানের জন্য, নিজের জন্য রাখেননি কিছুই। এসব অবহেলিত বৃদ্ধদের এখন শেষ আশ্রয় এখানেই। কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে এই অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে





কেবিনেই অলস সময় কা’টাচ্ছিলেন তিনি। বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া যায়, সঙ্গী-সাথী ও বিনোদন পাওয়া যায়, কিন্তু শেষ জীবনের এই পরম আরাধ্য আনন্দটুকু পাওয়া যায় না, যার জন্য তারা এই সময়টাতে ভীষণ মানসিক যন্ত্র’ণা আর ভা’রাক্রান্ত হৃদয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। এমনই একজন এই বৃদ্ধা মা রেহেনা খাতুন। রুমে ঢু’কতেই চোখে পড়ে তার রুমের দেয়ালে সাদা-কালো বেশকিছু ছবি। তিনি ছবিগুলোর সঙ্গে





পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। সেই ছবিগুলোর মধ্যে আছে তার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ছবিসহ ছে’লে আর স্বামীর ছবি। আলাপকালে তিনি জানান, তার স্বামী যোসেফ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পরিচালক ছিলেন। স্বামী কয়েক বছর আগে মা’রা গেছেন। একমাত্র ছে’লে পড়ালেখার জন্য আ’মেরিকায় থাকে। এই বৃদ্ধা মাকে দেখাশুনা করার মতো কেউ নেই দেশে। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় থাকা পছন্দ





করেন না তিনি। কেউ তাকে বোঝা মনে করবে এটা কোনোভাবেই সহ্য করতেও পারেন না তিনি। রাজধানীর দিলুরোডে তাদের নিজস্ব বাসা আছে। সেটা এখন ভাড়া দেয়া বলেও জানান তিনি।এখানে থাকতে কেমন লাগে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রথমে বললেন, ভালোই তো, সব বৃদ্ধারা মিলে একসঙ্গে থাকি, গল্প করি। পরক্ষণেই কিছুটা দীর্ঘশ্বা’স ছেড়ে বললেন, সবাই তো চায় শেষ বয়সে ছে’লেমে’য়ে, ছে’লের বউ, নাতি-নাতনির





সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করে সময় কা’টাতে। কিন্তু বাস্তব জীবনে সবারই তো ব্যস্ততা থাকে। যাক তবুও ভালোই আছি। নিজের স’ম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, তিনি কাম’রুন্নেসা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ইডেন কলেজ থেকে এইচএসসি পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কিছুদিন একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। বৃদ্ধাশ্রমে আসার পর থেকে সারাদিন সবার সঙ্গে গল্প করে, বই পড়ে সময় কা’টাতেন।





এখন বার্ধক্যজনিত কারণে আর বই পড়া হয় না। ছে’লের সঙ্গে কথা বলতে খুব ইচ্ছা করে। সে আমাকে খুব ভালোবাসে। মাঝে মাঝেই ফোন করে। আমিও অ’পেক্ষায় থাকি কখন সে কল করবে। শুধু মা দিবসে নয়, আমা’র ছে’লে আমাকে সবসময়ই ভালোবাসে। প্রবীণ হিতৈষীতে থাকা আরেক বৃদ্ধা মা আয়শা আক্তার (ছদ্ম নাম)। এই প্রবীণ নিবাসে থাকতে কেমন লাগে উত্তরে কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, রাতে ঘুম





আসে না। আর ঘুমালেও গভীর রাতে ঘুম ভে’ঙে যায়। তখন ছে’লেমে’য়েদের মুখগুলো খুব দেখতে ইচ্ছা করে। আজ মা দিবস জানেন? কিছুটা চুপ করে থেকে তিনি বলেন, জানি। কিন্তু আমা’র ছে’লেমে’য়ে ব্যস্ততার কারণে হয়তো ভু’লে গে’ছে। জানলে নিশ্চয়ই কল করবে আমাকে। মা দিবসে প্রবীণ হিতৈষীতে থাকা বৃদ্ধা মায়েদের সঙ্গে সময় কা’টাতে এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসলিমা ফারজানা। আলাপকালে





নি বলেন, ‘মা’ছোট্ট একটা শব্দ, কিন্তু কী’ বিশাল তার পরিধি। সৃষ্টির সেই আদিলগ্ন থেকে মধুর এই শব্দ শুধু মমতার নয়, ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার। মা যার নেই সেই বোঝে মায়ের অভাব। আমা’র মা মা’রা গেছেন অনেকদিন হলো। তাই তো বৃদ্ধাশ্রমে মা দিবসে এসব মায়েদের সঙ্গে সময় কা’টাতে এসেছি। তাদের সঙ্গে একটু গল্প করছি, তাদের জীবনের কথা শুনছি।
























