বিশ্বব্যাপী মহা’মা’রী করোনাভাইরাসের এই ক’ঠিন সময়ে জীবনের ঝুঁ’কি নিয়ে মানবসেবার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন চাঁদপুরের এক চিকিৎসক দম্পতি। তারা হলেন, চাঁদপুরের আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও এবং করোনাভাইরাস বি’ষয়ে ফোকালপার্সন ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেল ও চাঁদপুর সদর উপজে’লা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন।
দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সহকর্মীদের অনেকেই যখন আ’ত্মর’ক্ষায় নিজেদের গু’টিয়ে নিয়েছেন তখন মানবসেবার ব্রত নিয়ে করোনাবিরোধী সংগ্রামে আ’ত্মনিয়োগ করেছেন এই চিকিৎসক দম্পতি। একমাত্র সন্তানকে দাদা-দাদীর কাছে রেখে করোনা চিকিৎসায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকালে নিরলস পরিশ্রম ও
সাধারণ মানুষের পাশে থেকে আন্তরিকতার সাথে সেবা দেয়ায় ’করোনা জেনারেল’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন । বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে তাকে এই উপাধি দেয়া হয়। আর চাঁদপুরের আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেলকে
করোনাভাইরাস বি’ষয়ক ‘ফোকাল পারসন’ ও মেডিক্যাল টিমের প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছে।চলমান করোনাযু’’দ্ধে নিঃসন্দে’হে চাঁদপুরে চিকিৎসকদের মধ্যে শীর্ষযো’’দ্ধা এই দম্পতি। সেবা নিতে আসা মানুষ, শ’নাক্তকৃত রোগী, স্বজন, সহকর্মী ও স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তারাও তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। দেশে করোনা সং’ক্রমের শুরুতেই আইইডিসিআর’র করোনা
বি’ষয়ক প্র’শিক্ষণে জে’লা থেকে শুধুমাত্র এই দু’জন চিকিৎসক অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর ভি’ডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আরো কয়েক দফা প্র’শিক্ষণ গ্রহণ করেন এই চিকিৎসক দম্পত্তি। চাঁদপুর জে’লায় করোনার রোগী বাছাই, নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসা বি’ষয়ে যেসব চিকিৎসকের নাম সর্বোচ্চ ধাপে তাদের মধ্যেও শীর্ষে রুবেল-পলিন দম্পতি।
এই চিকিৎসক যুগলের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার ফসল হিসেবে চাঁদপুর জে’লার মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজে’লা ও সদর হাসপাতালে।হাসপাতালের নিয়মিত ডিউটির পাশাপাশি চিকিৎসা নিতে আসা লোকদের করোনা স’ন্দে’হভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা, করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা লোকদের নমুনা সংগ্রহ করা,
তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা’পত্র দেয়া, শ’নাক্তকৃত রোগীদের হাসপাতাল অথবা বাসায় (আইসোলেশন/কোয়ারেন্টাইন) চিকিৎসার বি’ষয়ে সি’দ্ধান্ত প্রদান ও চিকিৎসা’পত্র দেয়া, আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রোগীদের বাড়তি নজর রাখা, মৃ’’ত ব্যক্তির ময়নাত’দন্ত করা – একাধারে এসব কাজ করতে হয় ডাঃ রুবেলকে। এর পাশাপাশি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, মিডিয়াকর্মী,
রোগী ও তাদের স্বজনসহ আরো অনেকের সাথে কথা বলতে হয়, তথ্য দিতে হয়। পরম ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার সাথে হাসিমুখে এতসব সামাল দিচ্ছেন তিনি।ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, আসলে চাকরি বলেই নয়, মানবিক কারণে ঝুঁ’কি থাকা সত্ত্বেও কাজ করে যাচ্ছি। কাজের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হলো লোকজন তাদের সব উপসর্গ বলতে চায় না।
এতে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আ’ক্রা’ন্তের ঝুঁ’কি বাড়ছে। টানা ডিউটির পর বাসায় গেলে জরুরি প্রয়োজনে আবারো আসতে হয়। সেটা দিনে হোক আর গভীর রাতেই হোক। সবচেয়ে বেশি মিস করি আমা’দের একমাত্র সন্তানকে। ভাগ্যিস, আমা’র বাবা-মা বাসায় আছেন। তাই তাদের কাছে সন্তান রেখে আমর’া দু’জন মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
মানবসেবার ব্রত নিয়েই তো ডাক্তার হয়েছি। মাঝে মধ্যে ক্লান্তিও আসে কিন্তু পিছু হটলে তো হবে না। নিজেদের করোনাযু’’দ্ধের প্রহরী মনে করে আবার এগিয়ে যাই। এখান থেকে পিছু হ’টার সুযোগ তো নেই!সাজেদা বেগম পলিন বলেন, চিকিৎসা সেবাদানের ক্ষেত্রে আমা’র কোনো হাসপাতাল নেই। করোনাভাইরাসে আ’ক্রা’ন্ত বা উপসর্গ নিয়ে মা’রা যাওয়া ব্যক্তিদের বিশেষ ব্যবস্থায় দা’ফন করা,
সন্দে’হভাজন ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি টিম পাঠিয়ে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা, সন্দে’হভাজন, আ’ক্রা’ন্ত, মৃ’’তদের বাসা লকডাউন করার কাজ প্রতিদিনই করে যাচ্ছি। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘কোভিড-১৯’ নামের এক ফেইসবুক পেইজ থেকে লাইভে প্রতিদিন এ রোগ বি’ষয়ক তথ্য, পরামর’্শ, চিকিৎসা ও সতর্কতা তুলে ধরছি। আসলে কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে, কখন দিন যায়, রাত পার হয়- তা সব সময় টের পাই না।