









সংসারের অভাব অনটনের সঙ্গে দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল ব্যাংকের ঋণের বোঝা। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোন চাকরি মেলেনি। বাড়িতে রোজগেরে সদস্য বলতে রয়েছে বাবা। কিন্তু বর্তমানে তিনি বেশ অসুস্থ। এই অবস্থায় ফুটপাতে বসে চা বিক্রি ছাড়া অন্য কোন রাস্তা খুঁজে পাইনি সঞ্জু কুন্ডু। পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর এর বাসিন্দা সঞ্জু ।





২০১৩ সালে স্টার মার্কস পেয়ে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছিল সঞ্জু। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয় সে।২০১৫ সালে জয়েন এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়েছিল। জলপাইগুড়ির সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছিল সঞ্জু। ২০১৬ সালে মন্তেশ্বর বাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার টাকার শিক্ষা-ঋণ নেয় সে। হোস্টেল ফি পড়াশোনার খরচ সবটাই এই ঋণের টাকা থেকে মেটানোর চেষ্টা করেছিল সে।





সঞ্জুর দাবি, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়েছে যে, পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরি পেলে সেই চাকরির টাকা থেকে কিছু কিছু করে ঋণ শোধ করে দিলেও চলবে। ইতিমধ্যে বছর দুয়েক আগে সঞ্জুর বোনের বিয়ে হয়। তাই ঋণ পরিশোধ করা হয়ে ওঠেনি তার। সঞ্জুর বাবা পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা। তিনি বলেন, বহুদিন ধরে ঋণ শোধ করতে না পারার কারণে দু লক্ষ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে সেই ঋণ।





২০১৯ সালের শেষে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন সঞ্জু। নানান সংস্থায় গিয়ে আবেদন করেছে সে। অনলাইনে পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু সমস্ত আসা বৃথা হয়েছে কোন চাকরি পায়নি সঞ্জু। গত জুলাই মাসে ফুটপাতে তার বাবা চায়ের দোকান দিতে গিয়ে স্ট্রো’ক হয়। অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ইতিমধ্যে ব্যাংকের তরফ থেকে ঋণ পরিশোধের জন্য আইনি চিঠি পাঠানো হয়েছে।





সঞ্জুর দাবি, এককালীন ৮ হাজার টাকা করে জমা করার পরে,২৩০০ টাকা করে মাসিক কিস্তিতে ঋণ মেটানোর কথা ঠিক হয়। কিন্তু একদিকে সংসার খরচ, অন্য দিকে বাবার অসুস্থতার কারণে ওষুধপত্রের খরচ, তার হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে টাকা। তাই মাসখানেক আগে থাকতে মন্তেশ্বর মালডাঙ্গা রাস্তার ধারে চায়ের দোকান দিচ্ছে সঞ্জু। তার কথায়,”ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে চাকরি পেয়ে ঋণ শোধ করব ভেবেছিলাম। পরিস্থিতি যা তাতে চায়ের দোকান খুলতে হল! কী ভাবে টাকা শোধ করব, সংসারের কী হবে—বুঝতে পারছি না।”





মন্তেশ্বর এর বিধায়ক সৈকত পাঁজা বলেন,”পরিস্থিতির চাপে এক জন ইঞ্জিনিয়ারকে চায়ের দোকান খুলতে হয়েছে, যা কাম্য নয়। পরিবারটির পাশে রয়েছি”। ওই ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ানো যাবে কিনা সে ব্যাপারে আলোচনা করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
























