









ময়মনসিংহের ফুলপুরে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে নিহত আটজনের মধ্যে শিশু বুলবুলির (৮) লাশ বুকে জড়িয়ে ধরে এক ব্যক্তির আহাজারির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন এ ঘটনায় বাবা-মেয়ে দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে। আবার অনেকে মনে করছেন মেয়ের লাশ বুকে নিয়ে বাবা আহাজারি করছেন। মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সকালের মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় অনেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত টাইমলাইনে ছবিটি শেয়ার করে নানা মন্তব্য করছেন।





মাইক্রোবাসটি থেকে উদ্ধার করা হয় একের পর এক লাশ। সেখানে শিশু বুলবুলি আক্তারকে (৭) আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও শেষ পর্যন্ত বাবার বুকেই সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। এই ঘটনার একটি ছবি সামাজির যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি কেউ।





নিজের আদরের কন্যাকে বুকে জড়িয়ে অঝরে কাঁদছিলেন বাবা শাহজাহান। তার আর্তনাদ আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে সেখানকার আকাশ-বাতাস। এই শোকার্ত ও বেদনাবিধুর দৃশ্যই আরও একবার জোরেশোরে উচ্চারণ করলো আর কত প্রাণ হারালে বন্ধ হবে এই সড়ক সন্ত্রাস। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার টিম যখন তাদের পানি থেকে উদ্ধার করে তখনও প্রাণ হারানো মেয়েটিকেই বুকে জড়িয়ে শোকাতাপ করছিলেন শাহজাহান। সন্তানের প্রতি একজন বাবার ভালোবাসা কতটা তীব্র হতে পারে এটাই প্রমাণ করেছেন বাবা শাহজাহান। একমাত্র বাবা ছাড়া এই ভালোবাসা কেউ কখনও অনুভব করতে পারবেন না।





এতে কিছুটা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে দাবি করে ফুলপুর থানার ওসি ইমারত হোসেন বলেন, ‘ছবিতে অনেকেই বাবা ও মেয়ের নিহত হওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু দুর্ঘটনায় মেয়েটির বাবা শাহজাহান মারা যাননি। তাছাড়া মেয়েটির লাশ বুকে নিয়ে আহাজারি করা ব্যক্তিও মেয়েটির বাবা নন। তিনি মেয়েটির চাচা সারফুল আলম। আহাজারির সময় মেয়েটির বাবা শাহজাহানও পাশেই ছিলেন।’





এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, ভালুকা উপজেলার বিরুনীয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামের মিলন আক্তার (৬০), তার ভাই গফরগাঁও উপজেলার ভাতুরি গ্রামের শামছুদ্দিন (৫৮), তাদের দুই বোন পারুল আক্তার (৪৫) ও রিজিয়া আক্তার (৬৫), মিলন আক্তারের ছেলের বউ মোছাম্মাৎ বেগম (৩০), নাতনি বুলবুলি (৮), শামসুদ্দিনের মেয়ে রিপা আক্তার (২৫) ও শ্যালক নবী হোসেন (৩৫)।





দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা জানান, হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে ভাগ্নে মারা যাবার খবর পেয়ে মামা-খালাসহ ১৪ জন নিকট আত্মীয় মিলে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে যাচ্ছিলেন।





মঙ্গলবার ভোরে রওনা হয়ে ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে ফুলপুরের বাশাটি এলাকায় পৌঁছলে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হাঠাৎ করেই ঘুমিয়ে পড়েন মাইক্রোবাসের চালক। এতে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক থেকে নেমে যায় পাশের পুকুরে। এতে শিশু-নারীসহ প্রাণ হারান আট জন নিকট আত্মীয়।





পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পুকুর থেকে দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করেছে। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চালক পালিয়েছে।
দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া শাহজাহান মিয়া জানান, মাইক্রোবাসটি খুব দ্রুত গতিতে চলছিল, রাস্তায় কোনো গাড়ি ছিল না। হঠাৎ করে গাড়িটি পুকুরে পড়ে যায়। মনে হয় চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।সারফুল ইসলাম বলেন, ‘চালক খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গাড়ি নিয়ে বের হন। গাড়ি চালানোর সময় তার চোখ ঘুমে ঢুলু ঢুলু ছিল। গাড়িও দ্রুত গতিতে চালাচ্ছিলেন।’





ফুলপুর থানার ওসি ইমারত হোসেন গাজী জানান, ওই মাইক্রোবাসে মোট ১৪ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই নিকট আত্মীয়। নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
























